জমির মৌজা রেট

এখন থেকে, বাংলাদেশের জমি নিবন্ধন বা দলিল ‘মৌজা বিডিং পদ্ধতি’র মাধ্যমে বিদ্যমান মূল্য প্রতিস্থাপনের জন্য বাজার বাহিনী নির্ধারণ করবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন।

জমির মৌজা রেট

বাজার মূল্যে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব রুখসানা হাসিনার আহ্বায়ক সাত সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর উপসচিব জেহাদ উদ্দিনের নির্দেশে কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে জেহাদ উদ্দিনকে।

শর্তানুযায়ী জমি রেজিস্ট্রেশনে স্বচ্ছতা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বাজার মূল্যে জমি নিবন্ধন বাস্তবায়ন কমিটিকে প্রদান করবে বলে বলা হয়।

নিবন্ধন অধিদপ্তর কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে এবং বিএফআইইউ কমিটিকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস রোধে বিভিন্ন নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় বাজার দরে জমি ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। অর্থায়ন

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহকে নতুন সিস্টেমটি বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিবরা একসঙ্গে বৈঠক করে এই কমিটি গঠন করেন।

সমন্বয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, উচ্চমূল্যের জমি অনেক কম দামে দেখানো এবং লুকিয়ে রাখা অর্থ পরবর্তীতে বিদেশে পাচার করায় বৈধ অর্থের বিপুল পরিমাণ অবৈধ হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একাধিক বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের চেয়ে চোরাচালান রোধ করা ভালো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জমি রেজিস্ট্রেশন বাজার ভিত্তিক হলে অর্থ পাচার রোধ করা যেতে পারে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রকৃত মূল্য না দেখানোর কারণে অনেক সময় বৈধ অর্থ অবৈধ হয়ে যায়। বাজারভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বর্তমানে “মৌজা রেট” অনুযায়ী জমি ক্রয়-বিক্রয় বা নিবন্ধন করা হয়। ‘মৌজা রেট’ মানে সর্বনিম্ন মূল্য, অর্থাৎ ‘মৌজার হার’ থেকে কম দাম দেখিয়ে কেউ জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। মৌজা হার ‘সর্বনিম্ন বাজার মূল্যের নিয়ম’ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ধরনের হার সর্বশেষ 2016 সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সেই হারে নিবন্ধন করা হচ্ছে।

ভূমি নিবন্ধন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অধীনে ১৪টি মৌজা রয়েছে। এই ১৪টি মৌজায় ৮টি শ্রেণির জমি রয়েছে। ‘মৌজার হার’ অনুযায়ী, এই এলাকায় ১ দশমিক ১ জমির দাম ১ লাখ টাকা থেকে ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু গুলশানে কোথাও দশমিক প্রতি এক কোটি টাকার নিচে কোনো জমি কেনা-বেচা করা যায়নি। ধানমন্ডি এলাকার ‘মৌজা মূল্য’ অনুযায়ী এক দশমিক ৯৩ লাখ টাকা জমির দাম। কিন্তু বাস্তবে এখানে জমির দাম অনেক বেশি।

ভূমি রেজিস্ট্রেশনে বর্তমানে এলাকাভেদে যথাক্রমে 1.5 শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি, 1 শতাংশ নিবন্ধন ফি, 3 শতাংশ স্থানীয় সরকার কর এবং 1 থেকে 5 শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সাপেক্ষে।

Leave a Comment