বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাসের জন্য উন্মুখ, যা আধ্যাত্মিক প্রতিফলন, ভক্তি এবং আত্মসংযমের সময়। এই মাসে মুসলমানরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করে এবং ইফতার নামক খাবার দিয়ে তাদের রোজা ভাঙে।
এটি এমন একটি সময় যখন পরিবার এবং বন্ধুরা খাবার, ভালবাসা এবং আশীর্বাদ ভাগ করার জন্য একত্রিত হয়। ইফতারের আগে একটি দুআ (দোয়া) পাঠ করা আশীর্বাদ কামনা করার এবং খাদ্য ও রিযিকের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার একটি সুন্দর উপায়।
নিম্নে ইফতারের পূর্বে যে দুআ পড়তে হবে তার একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ রয়েছে:
রমজান আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণ এবং আত্ম-প্রতিফলনের মাস। এটি এমন একটি সময় যখন মুসলমানরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করে এবং খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকে। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, এবং এটি পালন করতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। উপবাস মানে শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিহার করা নয়, বরং এটি আত্মাকে শুদ্ধ করার, আত্ম-শৃঙ্খলার বিকাশ এবং যারা কম ভাগ্যবান তাদের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তোলার একটি উপায়।
রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইফতার খাবার। এটি সূর্যাস্তের সময় উপবাস ভঙ্গকারী খাবার। মুসলমানরা সাগ্রহে এই খাবারের প্রত্যাশা করে এবং এটি উদযাপন এবং কৃতজ্ঞতার সময়। খেজুর ও পানি দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একটি সুন্নত এবং এটি রোযার দিন শেষ করার একটি সুন্দর উপায়। খেজুর এবং জল প্রাথমিক গ্রহণের পরে, মুসলমানরা সাধারণত ইফতারের খাবারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে প্রার্থনায় নিযুক্ত হন।
ইফতারের খাবার শুরু করার আগে, মুসলমানরা তাদের রিযিক ও আশীর্বাদ প্রদানের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি দুআ (দোয়া) পাঠ করে। এই দোয়াটি দোয়া চাওয়ার, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং কম ভাগ্যবানদের স্মরণ করার একটি সুন্দর উপায়। ইফতারের আগে যে দুআ পাঠ করা হয় তা নিম্নরূপ:
“ধাহাবা আল-জামা, ওয়া আবতালাত আল-উরুক, ওয়া থাবাতা আল-আজর ইনশাআল্লাহ।”
অনুবাদ: “তৃষ্ণা দূর হয়েছে, শিরাগুলি আর্দ্র হয়ে গেছে, এবং পুরস্কার নিশ্চিত হয়েছে, যদি আল্লাহ চান।”
এই দুআটি আল্লাহ আমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি উপবাস ভঙ্গের সাথে যে স্বস্তি আসে তা স্বীকার করে এবং উপবাস করার ক্ষমতা এবং খাবারের সাথে উপবাস ভঙ্গ করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটা আমাদের সেই পুরস্কারের কথাও মনে করিয়ে দেয় যেটা আল্লাহ রোজাদারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং রমজান জুড়ে আমাদের ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ইফতারের আগে দুআ বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। মুসলমানরা আরবি বা তাদের মাতৃভাষায় এই দুআ পাঠ করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া।
ইফতারের আগে দুআ ছাড়াও, মুসলমানরা রোজা ভাঙার পরে একটি দুআ পাঠ করে, যা নিম্নরূপ:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলা রিজক-ইকা আফতারতু”
অনুবাদঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আমি আপনার উপর ভরসা করেছি এবং আমি আপনার রিজিক দ্বারা আমার রোজা ভঙ্গ করি।”
এই দুআ হল এটা স্বীকার করার একটি উপায় যে আমরা যা খাই তা সহ আমাদের যা কিছু আছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আশীর্বাদ। এটি আল্লাহর উপর আমাদের আস্থা রাখা এবং আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশনা ও আশীর্বাদ খোঁজার জন্য একটি অনুস্মারক হিসাবেও কাজ করে।
ইফতারের আগে একটি দুআ পাঠ করা দোয়া চাওয়ার, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং কম ভাগ্যবানদের স্মরণ করার একটি সুন্দর উপায়। এটা সেই আশীর্বাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যা আল্লাহ আমাদের দান করেছেন এবং রমজান জুড়ে আমাদের ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।
ইফতারের পূর্বের দুআ হল আল্লাহর আশীর্বাদের অনুস্মারক এবং মুসলমানদের তাদের কাছে থাকা বিধানের জন্য কৃতজ্ঞ হতে উৎসাহিত করে। এটি তাদের অনুস্মারক হিসাবেও কাজ করে যারা কম ভাগ্যবান এবং একই বিধানগুলিতে অ্যাক্সেস নাও থাকতে পারে। অতএব, মুসলমানদের জন্য তাদের ইফতারের খাবার অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া এবং রমজানে দাতব্য দান করার সুপারিশ করা হয়।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে ইফতারের আগে এই দুআ পাঠ করলে প্রচুর সওয়াব এবং আশীর্বাদ পাওয়া যায়। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে একটি হাদিস (বর্ণনা) অনুসারে, “রোজাদারের আনন্দের দুটি মুহূর্ত রয়েছে: একটি তার উপবাসের সময় এবং অন্যটি যখন সে তার প্রভুর সাথে দেখা করে।” (সহীহ মুসলিম)। অতএব, আন্তরিকতা ও কৃতজ্ঞতার সাথে এই দুআ পাঠ করা একজন রোজাদারের জন্য অফুরন্ত বরকত বয়ে আনতে পারে।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে মুসলমানদেরও রমজান মাসে ভাল আচরণ বজায় রাখার এবং পাপপূর্ণ আচরণ এড়ানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত। রমজান একটি আধ্যাত্মিক প্রতিফলন এবং আত্ম-শৃঙ্খলার একটি সময়, এবং মুসলমানদেরকে আল্লাহ এবং তাদের সহ-মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য এই মাসের সর্বাধিক ব্যবহার করতে উত্সাহিত করা হয়।
ইফতারের আগে দুআ ছাড়াও, মুসলমানদেরকে সারা দিন এবং রাতে অন্যান্য প্রার্থনা এবং আল্লাহর স্মরণ পাঠ করতে উত্সাহিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকির (স্মরণ) এবং স্বেচ্ছায় প্রার্থনা করা।
উপসংহারে, ইফতারের আগে দুআ পাঠ করা দোয়া চাওয়ার, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং কম ভাগ্যবানদের স্মরণ করার একটি সুন্দর উপায়। এটা সেই আশীর্বাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যা আল্লাহ আমাদের দান করেছেন এবং রমজান জুড়ে আমাদের ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। আল্লাহ আমাদের রোজা কবুল করুন এবং আমাদেরকে তাঁর রহমত ও রহমত দান করুন।